পরমাণু বিজ্ঞানী খুন, বদলা নেওয়ার অঙ্গীকার ইরানের
ইসরায়েল দায়ী দাবি রুহানির

ইরান তাদের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফকিরজাদেহ হত্যার বদলা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। গত শুক্রবার তেহরানের কাছে এক চোরাগোপ্তা হামলায় মহসেন নিহত হন।
বিবিসি জানিয়েছে, দামাভান্দ এলাকার আবজার্দে ইরানি এ পরমাণু বিজ্ঞানীর গাড়ি লক্ষ্য করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার পর আহত মহসেনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।
এ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বজ্রের মতো আঘাত হানার অঙ্গীকার করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেগান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলের দিকে আঙুল তুলে ‘রাষ্ট্রীয় এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা’ জানাতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে মহসেন ফকিরজাদেহকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী হাসান রুহানি বলেন, ‘আরো এক বার, বৈশ্বিক ঔদ্ধত্যের শয়তানি চক্র ও ভাড়াটে দখলদার ইহুদিবাদী সরকারের হাত একজন ইরানি সন্তানের রক্তে রঞ্জিত হলো।’
ইরায়েলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘শহীদ ফখরিজাদেহের গুপ্তহত্যা আমাদের শত্রুদের হতাশা ও ঘৃণার গভীরতা তুলে ধরেছে। তার আত্মত্যাগ আমাদের অর্জনের (পারমাণবিক কর্মসূচি) গতিরোধ করতে পারবে না।’
পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ধারণা, ফকিরজাদেহ-ই ছিলেন ইরানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির প্রধান। তেহরান অবশ্য সবসময়ই তাদের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ বলেই দাবি করে আসছে।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তখত রাভাঞ্চিও হত্যাকা-ের পেছনে বিদেশি শক্তি বিশেষ করে ইসরায়েলের জড়িত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, মহসেনের হত্যাকা- আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লংঘন। মধ্যপ্রাচ্যকে আরো অস্থিতিশীল করতেই এ কা- ঘটানো হয়েছে বলেও মত তার।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরায়েলের হাত আছে বলে অভিযোগ তুললেও এখন পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে অভিযোগ করতে গিয়ে মহসেন ফকিরজাদেহ এর নাম বলেছিলেন।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্পগুলোতে মহসেন কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সে সময় এই নামটি ‘মনে করে রাখতেও’ বলেছিলেন নেতানিয়াহু।
২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চার পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। ইরান এসব হত্যাকা-েও ইসরায়েল জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মহসেনের উপর হামলার জন্য যে-ই দায়ী হোক না কেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের আগে আগে এমন ঘটনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে।
তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নিয়ে পশ্চিমাদের নতুন উদ্বেগের মধ্যেই ইরানের এ শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী খুন হলেন। বেসামরিক পরমাণু শক্তি উৎপাদন কিংবা অস্ত্র কর্মসূচি- দুই ক্ষেত্রেই এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চুক্তি ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচিতে দৃশ্যত লাগাম টানতে বাধ্য করলেও দুই বছর আগে ডনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তেহরানও চুক্তিতে থাকা বিভিন্ন শর্ত লংঘন করা শুরু করে।
জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জো বাইডেন ইসরায়েলের আপত্তি সত্ত্বেও ফের ইরান চুক্তিতে ওয়াশিংটনকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মহসেনের হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সাবেক প্রধান জন ব্রেনান।
এ ঘটনায় ‘বিদেশি কোনো সরকার জড়িত কিনা’ সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও মন্তব্য করেছেন সাবেক এ প্রভাবশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তা।